বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৮ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: ‘…বাঙালি মরতে শিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভরাট কণ্ঠের এই আওয়াজে আজ সারা দেশ মুখর হবে।
আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করার আহ্বানের অধীর অপেক্ষায় ছিল বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। স্বাধীনতার যে ডাক বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, তা বিদ্যুৎ-গতিতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
সেদিন সকাল থেকেই চারদিক থেকে মানুষের ঢল নামে রেসকোর্স ময়দানে। ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ময়দান। বেলা ঠিক সোয়া ৩টায় সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির ওপর মুজিবকোর্ট পরিহিত বঙ্গবন্ধু যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন বাংলার বীর জনতা বজ্রনির্ঘোষে করতালি ও স্লোগানের মধ্যে তাকে স্বাগত জানান।
এরপর বঙ্গবন্ধু ২২ মিনিট তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম ও ঐতিহাসিক ভাষণ শুরু করেন এভাবে—‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।… আজ বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়।’ এরপর গত কয়েক দিনের ঘটনাবলি, শাসকশ্রেণির সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়া এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় বাঙালির দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি ভাষণে বলেন, …‘এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।…. সৈন্যরা তোমরা ব্যারাকে থাক, তোমাদের কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আর তোমরা গুলি করার চেষ্টা কর না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’
বঙ্গবন্ধু যখন এ ভাষণ দিচ্ছিলেন, ঠিক ঐ দিনই ঢাকায় এসে পৌঁছান জেনারেল টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী। আলোচনার অন্তরালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সামরিক প্রস্তুতির এই পর্যায়ে এ ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেশের জনগণকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে। এই একটি ভাষণেই নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেন বঙ্গবন্ধু। তাই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎসাহ হয়ে থাকবে।
২০১৭ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর এই তেজোদীপ্ত ঘোষণাই ছিল আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। এর আগে লেখক ও ইতিহাসবিদ জ্যাকব এফ ফিল্ডের বিশ্বসেরা ভাষণ নিয়ে লেখা ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস : দ্য স্পিসেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্ট্রি’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্থান পায়। অসংখ্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে এই ভাষণ।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে (মুজিববর্ষ) এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাঙালির মন-মননে চিন্তা-চেতনে আদর্শ-অনুপ্রেরণে চেতনায়-জাগরণে প্রদীপ্ত শিখা রূপে প্রবাহিত হবে।